দীপ মোমবাতি জ্বালানোর তাৎপর্য্য কি? - স্বামী সোমেশ্বরানন্দ - হিন্দু পেইজ

হিন্দু পেইজ

সনাতনী সংবাদ বিশ্বময়

Breaking

Saturday, April 4, 2020

দীপ মোমবাতি জ্বালানোর তাৎপর্য্য কি? - স্বামী সোমেশ্বরানন্দ

 কয়েকজন ডাক্তার ও মনোবিজ্ঞানী এর সুফল নিয়ে আলোচনা করেছেন কতগুলি হিন্দি ও ইংরেজি নিউজ চ্যানেলে। এই কাজকে সমর্থন করেছেন। আমরা এখানে বিজ্ঞানের পরিভাষা না দিয়ে সহজভাবে বলবো সমবেতভাবে দীপ ও আলো জ্বালানোর তাৎপর্য্য নিয়ে।
     আপনি বাড়িতে একা জপ-ধ্যান করেন, আবার বিশেষ বিশেষ দিনে নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে বসেই সমবেত প্রার্থনায় যোগ দেন। এই দুই সময়ে ভিন্ন রকম মানসিক অবস্থা লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই। আশ্রমে জপযজ্ঞ বা সমবেত ধ্যানে মন যে সহজে একাগ্র হয়, এও অনুভব করেছেন। কেন এমন হয়?
    সমবেত সাধনায় মানুষের অতিরিক্ত শক্তি জেগে ওঠে, মনে উৎসাহ আসে। কেন? কারণ অন্যদের তন্মাত্রা আপনার তন্মাত্রাকে তীব্র করে তোলে। কোনো কাজ একা করা ও অন্যদের সাথে মিলে করা, এই দুইয়ে যে পার্থক্য রয়েছে এটা জাগতিক যেকোনো কাজে দেখা যায়। এ শুধু দৈহিক নয়, মানসিক ভাবেও কাজ করে।
     নৈকট্য (closeness) দেহগত যেমন হয়, মানসিকও কার্যকরী হয়। এভাবেই সমবেত প্রার্থনা কাজ করে। এর ব্যাখ্যার জন্য ইউটিউবে সার্চ করুন swami someswar anudhyan, ওখানে দেখুন "প্রার্থনা" ভিডিও।
     এভাবে সমবেতভাবে কাজে ব্যক্তি ও সমষ্টি ক্ষেত্রে পরিণতি দেখা যায়। এটা এই সংকটের সময়ে বিশেষভাবে দরকার হচ্ছে বর্তমানে কারণ দেখা যাচ্ছে অনেক মানুষ গৃহবন্দী থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানসিকভাবে। অস্বস্তি, ভয়, একঘেয়ে ভাব ব্যাপক হচ্ছে। এরই সাথে ঘরোয়া হিংসা বাড়ছে। আমেরিকায় ২১%, অস্ট্রেলিয়ায় ৭৫% বেড়েছে। ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানিতে সরকার বিশেষ ব্যবস্থা করছে এজন্য। ভারতে রাষ্ট্রীয় মহিলা আয়োগ এ নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছে এবং পীড়িত মহিলাদের জন্য যোগাযোগের লাইন খুলেছে। চীনে ডিভোর্সের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
     দেখা গেছে যে অঞ্চলে সমবেত প্রার্থনা বা নৈকট্য বাড়ানো হয়েছে সেখানে এটা অনেক কম। ভারত থেকে এ বিষয়টি অনেক দেশই শিখছে। স্পেনের হাসপাতালে ডাক্তার নার্স কর্মীরা ডিউটির পর সম্মিলিতভাবে ॐ জপ করছেন। এজন্য মোদী যে আগে ও বর্তমানে নিজের নিজের বাড়ি থেকে এক বিশেষ সময়ে সম্মিলিতভাবে শব্দ ও আলো ছড়িয়ে দেবার জন্য দেশবাসীর কাছে বলেছেন, এর তাৎপর্য্য বোঝা যায়। গতবারে শব্দ ও এবারে আলো। দুটো একই সাথে করলে audio-visual effect জোরালো হতে পারে। সম্ভবত দুটিকে আলাদা করে দিব্যাঙ্গদেরও জড়িত করার চেষ্টা হচ্ছে। কিংবা প্রথমেই কঠিন বিষয় না দিয়ে আলাদা করে পরীক্ষা চলছে।
    দুটি দিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্মিলিতভাবে যে মানসিক নৈকট্য তৈরি হয় তার ফলে মানুষের একাকীত্ব ও অসহায় ভাব দূর হয় এবং solidarity দেখা দেয়। এই ভাব ঘরে ও পরিবারে কাজ করে। দ্বিতীয়ত, গৃহবন্দী অবস্থায় অস্বস্তি ভাব মূল লক্ষ্য (social distance) ভুলে অন্য চাহিদাকে বড় করে তুলতে পারে। এই সম্মিলিত ক্রিয়া মানুষের মনে মূল লক্ষ্যকে জাগ্রত ও তীব্র রাখে।
     গতবার বিকেলে কিন্তু এবার রাতে কেন? দিনে রাতে বিভিন্ন সময়ে প্রকৃতির অবস্থা বা তরঙ্গ আলাদা আলাদা থাকে। এজন্য একবার দিনে ও পরে রাতে সম্মিলিত ক্রিয়াকান্ড করে মানুষ অভ্যস্ত হচ্ছে যে-কোনো সময় এ করার। তাছাড়া রাত ৯টার এক গুরুত্ব রয়েছে। শিব ও কালী পুজো এই সময়ে শুরু হয় সাধারণত। ব্রাহ্মমুহূর্ত, সন্ধ্যা, মধ্য রাত ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ সময় যখন প্রকৃতিতে শান্তভাব থাকে। এই সময় ব্যক্তিচেতনা সহজে যেতে পারে বিশ্বচেতনার দিকে, কারণ প্রকৃতিতে অস্থির উপাদান বা বাধা কমে যায়। ফলে ব্যক্তি চেতনাগুলি সামূহিক সত্বা তৈরি করতে পারে। আর এভাবে অসংখ্য ব্যক্তিমানসের তন্মাত্রাগুলি একত্র হয়ে প্রচণ্ড শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
     এভাবে বিশেষ উদ্দেশ্যের শুভ সংস্কারগুলি খুব জোরালো হয়ে অশুভ সংস্কারকে দুর্বল করে দেয়। এবং প্রকৃতির মধ্যে যে প্রতিকূল উপাদান রয়েছে তা সরিয়ে দেয়। এ নিয়ে বিশদ আলোচনা আছে "১০০ প্রশ্ন উত্তর", "ঈশোপনিষদের আলোকে" ইত্যাদি বইয়ে।
     দীপ বা আগুণ জ্বালিয়ে প্রকৃতি বা হাওয়ার মধ্যে পরিবর্তন আসে, এ তো আপনি দেখেছেন। বিজ্ঞানের মতে, এতে অক্সিজেন কমে যায়। কিন্তু এ নিয়ে বেশ কয়েকটা পরীক্ষা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা ৭-৮ বছর আগে নাগপুর ও অন্যান্য শহরে। শান্তিকুঞ্জ আশ্রম বিভিন্ন শহরে গায়ত্রী যজ্ঞ করতেন। তাদের দাবী ছিল, এতে বাতাস পরিস্কার হয়। বিজ্ঞানীদের এক গ্রুপ তখন এই যজ্ঞ অনুষ্ঠানে নানারকম পরীক্ষা করে দেখে যে যজ্ঞের পর অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ছে। কিভাবে এ সম্ভব? শান্তিকুঞ্জের বক্তব্য ছিল, হাওয়া গরম হলে উপরে উঠে যায় এবং চারপাশের শুদ্ধ বায়ু ঐ স্থানে ছুটে আসে। এজন্য বিশেষভাবে আগুনের ব্যবহার করা যায় কি এটা ঘটাবার? কালীপুজোয় দীপ জ্বালানো  হলে বহু পোকা মরে। এরকম দীপ জ্বালিয়ে পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে বিশেষ বিশেষ ভাইরাস নষ্ট করা যায় কি? এ নিয়ে পরীক্ষা করাটা  খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন বলা হচ্ছে যে উচ্চ তাপে কোরোনা টিঁকতে পারে না।

Pages